Claim– বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান। যশোরের এক মাদ্রাসায় আই এস এর তৎপরতা।
Fact– ভাইরাল ভিডিওটি কোন জঙ্গি সংগঠনের নয়। মাদ্রাসার বার্ষিক অনুষ্ঠানে ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ প্রতিযোগিতা পর্বের একটি নাটিকা মাত্র।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয় যেখানে বন্দুক হাতে বোরকা পরিহিত দুইজন ও আরও একজনকে একটি মঞ্চে দেখা যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, কালো কাপড় পরিহিত আপাদমস্তক আবৃত পোশাকে অস্ত্র সাদৃশ্য বস্তু হাতে নিয়ে দুইজন সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছেন ও একজন পেছনে আরবিতে ভাষণ দিচ্ছেন। ভাইরাল পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, এটি বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের উত্থান।
শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইসিটি উপদেষ্টা, একই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করে দুইজন দেহরক্ষীসহ একজন আই এস সদস্য বক্তৃতা দিচ্ছে। পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। তিনি তার পোস্টে আরও উল্লেখ করেন ড ইউনুস পরিচালিত এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে দেশে জঙ্গি সংগঠনগুলো পুর্ণ সামর্থ্য ব্যবহার করে জনবল নিয়োগ দিচ্ছে।
এছাড়াও একাধিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী একই দাবিতে ছবিটি পোস্ট করে। ভাইরাল পোস্টগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
নিউজচেকার যাচাই করে দেখেছে দাবিটি মিথ্যা।
Fact check/Verification
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান/আই এস সদস্যদের মাথাচাড়া দিয়ে উঠার দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে আমরা প্রাথমিকভাবে একাধিক কি-ওয়ার্ড সার্চ পরিচালনা করি। কি-ওয়ার্ড সার্চ এ একাধিক জাতীয় দৈনিক এর প্রতিবেদন সামনে আসে যেখান থেকে জানা যায়, এটি কোন জঙ্গি সংগঠনের কর্মসূচী নয় বরং, যশোর জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের একটি নাটিকা বলে নিশ্চিত করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
প্রতিবেদন দেখুন এখানে- দৈনিক ইত্তেফাক, কালবেলা, বাংলা ট্রিবুউন।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম মুফতি লুৎফর রহমান ফারুকী সাংবাদিকদের বলেন, সদর উপজেলায় মাদ্রাসাটি সুনামের সঙ্গে শিক্ষাদান করছে, যেখানে মক্তব, হেফজ, কিতাব ও নাজিরা বিভাগসহ মোট সাড়ে চারশ’ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। প্রতিবছরের মতো এবছরও ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর মাদ্রাসায় বার্ষিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে গজল, বাংলা, আরবি, হামদসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে ইসরাইলের ফিলিস্তিন মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের বিষয় নিয়ে একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়, যা কিতাব বিভাগের তিন শিক্ষার্থী অভিনয় করে। তাদের মধ্যে একজন ফিলিস্তিন নেতা সেজে আরবিতে বক্তব্য দেয়, এবং পাশেই প্লাস্টিক দিয়ে অস্ত্র তৈরি করে। এটি শুধুমাত্র অভিনয়, কিন্তু কিছু মানুষ এই ভিডিওটি নিয়ে ভিন্ন উদ্দেশ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আসলে বিষয়টি তেমন কিছু নয়।
অধিকন্তু কি-ওয়ার্ড সার্চ পরিচালনায়, আমরা যশোর জেলা পুলিশ এর সংশ্লিষ্ট ঘটনায় একটি ব্রিফিং এর সন্ধান পাই। ব্রিফিংয়ে যশোর জেলা পুলিশেরপক্ষ থেকে একজন কর্মকর্তা জানান, উক্ত ঘটনাটি যশোর জেলা পুলিশ সাইবার পেট্রোলিং টিমের নজরে আসে। পরবর্তীতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশে তদন্ত পরিচালনা করে। তদন্তে যশোর জেলা পুলিশ জানতে পারে এটি কেবলমাত্র একটি বার্ষিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ পর্বের একটি অভিনয়। এমনকি উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলোও কর্কশিট দিয়ে তৈরি।
এছাড়াও, যশোর জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার ফেসবুক পেইজে সত্য ঘটনার উন্মোচন করে একাধিক প্রতিবেদন শেয়ার করা হয়।
Conclusion
অতএব, ভাইরাল ভিডিওটি কোন জঙ্গি সংগঠনের নয়। একাধিক প্রতিবেদন, মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ও যশোর জেলা পুলিশের ব্রিফিং থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় এটি ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের সাথে সৌহার্দ্য জ্ঞাপন করে উপস্থাপিত একটি নাটিকা মাত্র। সুতরাং, ভাইরাল দাবিটি সত্য নয়।
Result: False
Our Sources:
যশোর জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার ফেসবুক পেইজে
যশোর জেলা পুলিশ এর সংশ্লিষ্ট ঘটনায়- ব্রিফিং
ইত্তেফাক, কালবেলা, বাংলা ট্রিবুউন।