Newchecker.in is an independent fact-checking initiative of NC Media Networks Pvt. Ltd. We welcome our readers to send us claims to fact check. If you believe a story or statement deserves a fact check, or an error has been made with a published fact check
Contact Us: [email protected]
Viral
মে মাসের শুরু থেকে বহু দেশে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব চলছে, ১৩ মে ২০২২ সাল থেকে ২৫ মে ২০২২ পর্যন্ত, বিশ্বব্যাপী মোট ২১৯ জনের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত করা হয়। বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মাঙ্কিপক্স মোকাবিলায় বিশেষ সর্তকতা জারি করেছে। কিন্তু এই ভাইরাসটি ঠিক কি এবং কিভাবে তা ছড়িয়ে পড়ছে ? কে ঝুঁকিতে আছে এবং আমরা কি অন্য আরেকটি মহামারির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি? এই ভাইরাস সম্পর্কে আপনার জানা দরকার এমন সব তথ্য বিবরণ নিয়ে, নিউজচেকারের এই প্রতিবেদন:
মাঙ্কিপক্স নামটি ১৯সালে ডেনিশ ল্যাবরেটরিতে বানরের মধ্যে এই ভাইরাসের প্রাথমিক উপস্থিতি দেখা যায়। মাঙ্কিপক্স হল একটি ভাইরাল জুনোসিস (প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত একটি ভাইরাস) যা অতীতে গুটিবসন্তের রোগীদের মধ্যে দেখা যায় এমন লক্ষণগুলির মতো, যদিও এটি চিকিৎসাগতভাবে কম গুরুতর। এটি একটি অর্থোপক্সভাইরাস, যা গুটিবসন্ত, কাউপক্স এবং ক্যামেলপক্স আক্রান্তকারি একই পরিবারের অন্তর্গত ।
এটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়, এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রাণীর মধ্যে রয়েছে ইঁদুর এবং অ-মানব প্রাইমেট। কাঠবিড়ালি, গাম্বিয়ান পোচড ইঁদুর, ডরমাইস, বিভিন্ন প্রজাতির বানর এবং এছাড়াও অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে মাঙ্কিপক্সে প্রাদুর্ভাবের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে, অতীতে মাঙ্কিপক্সের বেশিরভাগ ঘটনা মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকা থেকে রিপোর্ট করা হয়েছে, প্রধানত, ১১টি দেশে: বেনিন, ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, গ্যাবন, কোট ডি’আইভরি, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সিয়েরা লিওন এবং দক্ষিণ সুদান।
১৯৭০ সালে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে, একটি শিশুর দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত করা হয়েছিল, যা মানবদেহে প্রথম। কিন্তু, মাঙ্কিপক্স নিরাময়ের জন্য কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ নেই কারণ চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, রোগের লক্ষণগুলি সাধারণত নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। সাধারণত, ফুসকুড়ির যত্ন এবং তা স্পর্শ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। মুখ এবং চোখে ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে (যাদের কর্টিসোন নেই)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে, “গুরুতর ক্ষেত্রে ভ্যাক্সিনিয়া ইমিউন গ্লোবুলিন (ভিআইজি) ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি অ্যান্টিভাইরাল যা স্মলপক্সের চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হয়েছিল (টেকোভিরিম্যাট, টিপিওএক্সএক্স হিসাবে বাণিজ্যিকীকরণ)। এছাড়াও, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসার জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।” গুটিবসন্তের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য উপলব্ধ ভ্যাকসিনগুলি মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধেও কার্যকর।
WHO-এর মতে, মাঙ্কিপক্সের ইনকিউবেশন পিরিয়ড সাধারণত ৬ থেকে ১৩ দিনের মধ্যে থাকে, তবে ৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে হতে পারে। মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, জ্বর, ফোলা লিম্ফ নোড, শরীরে ব্যথা এবং চরম ক্লান্তি।
এটি পরে ফুসকুড়ি হতে পারে, যা গুটি আকারে পরিণত হতে পারে। ত্বকের বিস্ফোরণ সাধারণত জ্বরের ১-৩ দিনের মধ্যে শুরু হয় এবং ফুসকুড়িগুলি মুখ এবং হাতের দিকে বেশি ঘনীভূত হয়।
সিনিয়র ফার্মাসিউটিক্যাল বিশ্লেষক স্যাম ফাজেলির মতে, “আপনি যদি গুটি আকৃতির এই ফুসকুঁড়িগুলিতে আচ্ছাদিত হন, তাহলে আপনার ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি থাকবে এবং কিছু ক্ষেত্রে সেপসিস হবে। প্রাণঘাতীতা সেখান থেকেই আসতে পারে।” WHO-র মতে, মাঙ্কিপক্স সাধারণত একটি স্ব-সীমাবদ্ধ রোগ যার লক্ষণ ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
মাঙ্কিপক্স রক্ত, শারীরিক তরল বা সংক্রামিত প্রাণীর মিউকোসাল ক্ষতের সাথে সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। WHO বলেছে যে, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সাধারণত শ্বাসযন্ত্রের নিঃসরণ, সংক্রামিত ব্যক্তির ত্বকের ক্ষত বা সম্প্রতি দূষিত বস্তুর সংস্পর্শে।” মা থেকে শিশুর মধ্যে প্ল্যাসেন্টার মাধ্যমেও সংক্রমণ ঘটতে পারে। মাঙ্কিপক্স ফুসকুড়ি কখনও কখনও যৌনাঙ্গে এবং মুখের মধ্যে পাওয়া যায়, যা যৌন যোগাযোগের সময় সংক্রমণে অবদান রাখতে পারে, তবে মাঙ্কিপক্স যৌনরোগ নয়।
WHO-এর মতে, মাঙ্কিপক্স ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নেই কারণ, এটি সাধারণত খুব সংক্রামক হিসাবে বিবেচিত হয় না। মাঙ্কিপক্স সংক্রামক ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ শারীরিক যোগাযোগের প্রয়োজন হয়। “সাধারণ জনগণের জন্য ঝুঁকি কম,” বলেন মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগের প্রধান, ইউনিভার্সিটি ইউসিএইচ ডাঃ ফাহিম। তিনি আরও বলেন যে, মাঙ্কিপক্স কোভিড-১৯ এর মতো আরেকটি মহামারী হওয়ার ঝুঁকি নেই কারণ এটি নতুন নয় এবং এটি কোভিডের চেয়ে কম সংক্রামক।
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিন নেয়ার পরও কেন মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে?
WHO এর মতে, মাঙ্কিপক্সের ক্ষেত্রে মৃত্যুর অনুপাত ঐতিহাসিকভাবে সাধারণ জনসংখ্যার মধ্যে ০ থেকে ১১% পর্যন্ত এবং ছোট বাচ্চাদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে, মৃত্যুর অনুপাত প্রায় ৩-৬%। পশ্চিম আফ্রিকার ক্লেডে মানুষের সংক্রমণ কঙ্গো বেসিন ক্লেডের তুলনায় কম গুরুতর রোগের কারণ,মৃত্যুর হার কঙ্গো বেসিন ক্লেডের ১০.৬% এর তুলনায় পশ্চিম আফ্রিকার ক্লেডে ৩.৬%।
নেদারল্যান্ড, কানাডা, ইজরায়েল, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভেনিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাঙ্কিপক্সের সাম্প্রতিক শনাক্তকরণের সাথে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড সহ ১৯টি দেশে মাঙ্কিপক্স সনাক্ত করা হয়েছে।
যদিও বাংলাদেশে এখনও মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তি শনাক্ত হয়নি। তবুও, মাঙ্কিপক্স মোকাবেলায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
WHO:
https://www.who.int/emergencies/disease-outbreak-news/item/2022-DON385
ecdc: https://www.ecdc.europa.eu/en/news-events/epidemiological-update-monkeypox-multi-country-outbreak
এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয় নিউজচেকারে, যা অনুবাদ করেছে আফরোজ জাহান।
সন্দেহজনক কোনো খবর ও তথ্য সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে অথবা সত্যতা জানতে আমাদের লিখে পাঠান [email protected]। এছাড়াও আমাদের সাথে Contact Us – ফর্মের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন।