Claim
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম টিকটকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বলতে শোনা যায়, “আমি জালিয়াতি করেছি, অর্থ আত্মসাৎ করেছি, অর্থ পাচার করেছি”। এছাড়াও প্রচারিত ভিডিওটিতে দাবি করা হয়, সেনাপ্রধানের নির্দেশে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এমন দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Fact
বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে ভাইরাল ভিডিও হতে প্রাপ্ত কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ড. ইউনূসের স্বীকারোক্তির দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ৩ মে তারিখে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়৷
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সঙ্গে প্রদত্ত ভিডিওটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। তবে ভাইরাল দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে ড. ইউনূসের বক্তব্যকে স্বীকারোক্তিমূলক হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও, ড. ইউনূসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত দীর্ঘ ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় যে, তিনি এই মন্তব্যটি স্বীকারোক্তি হিসেবে করেননি। বরং, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে গিয়েই তিনি উক্ত মন্তব্যটি করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, “আজকে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছি। দুর্নীতি দমন কমিশন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে দুর্নীতির। আমি জালিয়াতি করেছি, অর্থ আত্মসাৎ করেছি, অর্থ পাচার করেছি এ রকম বহু ভয়াবহ শব্দ আমার অপরাধ হিসেবে বলা হয়েছে। আপনারা আমাকে বহুদিন থেকে চেনেন, এ অপরাধগুলো আমার গায়ে লাগানোর মতো অপরাধ কিনা আপনারাই বিবেচনা করবেন। আগে যে রকম আপনারা বিবেচনা করেছেন”। উক্ত ভিডিওটির বিষয়ে ড. ইউনূসের ফেসবুক পেজের ক্যাপশনে বলা হয়, “আমি এক কোটি গরিব মানুষকে একটি ব্যাংকের মালিক বানিয়েছি: সকাল ১১টা ১৬ মিনিটে ঢাকা জজ কোর্টে প্রবেশ করেন ড. ইউনূস। জামিন আবেদনের শুনাসি শেষে আদালত থেকে বেড়িয়ে ড. ইউনূস সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি এক কোটি গরিব মানুষকে একটি ব্যাংকের মালিক বানিয়েছি। আমাকে যখন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেয়া হয়, তখন গ্রামীণ ব্যাংকের ৯৭ শতাংশ মালিকানা আমাদের সদস্যদের কাছে ছিল। সুদ যদি গ্রহণ করে থাকেন, তারাই গ্রহণ করেছেন। আমি একজন কর্মচারী মাত্র, সেটা আপনারা জানতেন। আমি গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক ছিলাম না কখনো। বলেন, আজকে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছি। দুর্নীতি দমন কমিশন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে দুর্নীতির। আমি জালিয়াতি করেছি, অর্থ আত্মসাৎ করেছি, অর্থ পাচার করেছি এ রকম বহু ভয়াবহ শব্দ আমার অপরাধ হিসেবে বলা হয়েছে। আপনারা আমাকে বহুদিন থেকে চেনেন, এ অপরাধগুলো আমার গায়ে লাগানোর মতো অপরাধ কিনা আপনারাই বিবেচনা করবেন। আগে যে রকম আপনারা বিবেচনা করেছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এটা আমার একার বক্তব্য নেয়ার তো দরকার নাই! দেশের মানুষের কাছে যান, তারা বলবে আদালত কি নিয়ন্ত্রিত না নিজের ইচ্ছায় চলে। আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি তো খালি আদালত থেকে আদালতে যাচ্ছি, আমাকে বলা হচ্ছে আমি জোচ্চোর, আমি জালিয়াত, আমি অর্থ আত্মসাৎকারী ইত্যাদি ইত্যাদি। তথ্য সব আপনাদের কাছে আছে, আপনারা বিচার করে বলেন, আমাকে দেখলে কি মনে হয়, আমি জোচ্চুরি করার জন্য এই ব্যবসায় নেমেছি?”
Read More: শেখ হাসিনা মহানবীর রওজা মোবারক জিয়ারত করছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পুরোনো
এ বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম দ্যা ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইটে গত বছরের ০২ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেসময়ে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ জামিন শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সামনে ড. ইউনূস বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে, তিনি জালিয়াতি করেছেন, অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, এবং অর্থ পাচার করেছেন এমন গুরুতর শব্দ ব্যবহার করে তার অপরাধ বর্ণনা করা হয়েছে।
অর্থাৎ, এ থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায় যে, ড. ইউনূসের উক্ত মন্তব্যটি স্বীকারোক্তিমূলক ছিল না। বরং, তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করছিলেন। তাছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটিও পূর্ববর্তী সরকারের সময়কালের।
সুতরাং, পুরোনো এবং বিকৃত ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে যে, ড. ইউনূস অর্থ পাচার, আত্মসাৎ ও জালিয়াতি স্বীকার করেছেন এবং সেনাপ্রধানের নির্দেশে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
Result: False
Our Sources
Muhammad Yunus Official Facebook Page
The Daily Star
যে কোন বিষয়ের সত্যতা জানতে, মতামত অথবা অভিযোগ প্রদানে আমাদের ই-মেইল করুন এই ঠিকানায়- [email protected]. এছাড়াও ভিজিট করুন আমাদের Contact Us পেইজটি এবং নির্দিষ্ট ফর্মটি পূরণ করুন।