সম্প্রতি স্বল্পদীর্ঘ ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয় এক স্কুল-শিক্ষার্থীর আত্নহত্যার সংবাদ। দাবি করা হয়, সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার জন্য আত্মহত্যা করেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের এক শিক্ষার্থী, নাম তার অরিত্রী।
অন্যান্য ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলো আত্নহত্যার কারণ হিসেবে বিভিন্ন দাবি করে। যার মধ্যে, সামাজিক মাধ্যমে ট্রল হওয়ার পরে এই স্কুল-শিক্ষার্থীর আত্নহত্যার দাবির পাশাপাশি পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পরায় আত্নহত্যা করেছে অরিত্রী অন্যতম।
Fact Check/ Verification
ভাইরাল টিকটক ভিডিওতে দেখা যায়, মুখে মাস্ক পড়া একজন মাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থী অন্যান্য সহপাঠীদের সাথে একটি শ্রেণীকক্ষে বসে ক্লাস করছেন। যা প্রচারিত হয় ডিবিসি ২৪/৭ নিউজে। এবং ভিডিওর শুরুতে দেখা যায় সংবাদ চ্যানেল সময় টিভিতে প্রচারিত খবরের একটি অংশ। সংবাদ পাঠককে বলতে শোনা যায়, আত্নহত্যা করেছে অরিত্রী।
ভিডিওটির কী-ফ্রেম অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির শেষ অংশ সংবাদ ভিত্তিক চ্যানেল ডিবিসিতে প্রচারিত একটি সংবাদের কিছু অংশ। সংবাদটি প্রচারিত হয় ১২ই সেপ্টম্বর ২০২১, এবং সংবাদটির শিরোনাম ভিকারুননিসার অধ্যক্ষকে হুমকির অভিযোগ । সংবাদটিতে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ অভিযোগ করেন, স্কুলের গভরর্নিং বডির সদস্যরা তাকে নাজেহাল করেছেন এবং প্রাণনাশের হুমকির বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
প্রায় ১৮ মাস সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার কমায়, গত ১২ই সেপ্টেম্বর থেকে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবারও শুরু হয় ক্লাসরুম ভিত্তিক শিক্ষা প্রদান। দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম দীর্ঘদিন ছুটির পরে আবারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার খবরটি প্রচার করে। যেখানে সকল শিক্ষার্থীদের মাস্ক পড়ে থাকতে দেখা যায়।
Fact Check: সরকার কি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে?
সংবাদের প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে শ্রেনীকক্ষে শিক্ষার্থীদের কিছু ভিডিওচিত্র রেকর্ড করা হয়। স্কুলের অধ্যক্ষের অভিযোগ নিয়ে প্রচার করা সংবাদে ব্যবহার করা হয় সেই ভিডিওচিত্র, যার কিছু অংশ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে দাবি করা হয়, এই সংবাদটি এক স্কুল-শিক্ষার্থী আত্নহত্যার খবর । এবং এই স্কুল-শিক্ষার্থীর আত্নহত্যার কারণ হিসেবে করা হয় বিভিন্ন দাবি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে দাবী করা হয়, মেয়টির নাম ইসমত জাহান সাফা। যদিও অ্যাকাউন্টগুলো আসলেই, এই একই মেয়ের কিনা তা যাচাই করা হয়নি। এবং এই শিক্ষার্থীর নাম ইসমত জাহান সাফা কিনা, সেই বিষয়েও কোনও তথ্য বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম থেকে জানা যায়নি।
ভিডিওটির বাকিঅংশে জুড়ে দেয়া হয় ২ বছর আগের প্রচারিত অন্য একটি সংবাদের সাথে। যেখানে সংবাদ পাঠককে বলতে শোনা যায়, এক স্কুল-শিক্ষার্থীর আত্নহত্যার খবর। যেই স্কুল-শিক্ষার্থী আত্নহত্যা করেছে তার নাম অরিত্রী।
কে এই অরিত্রী ?
অরিত্রী অধিকারী, ৩রা ডিসেম্বর ২০১৮ সালে, নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ওড়না ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল অরিত্রী। ২রা ডিসেম্বর পরীক্ষা চলার সময় মোবাইল ফোন পাওয়া যায় আরিত্রীর কাছে। অরিত্রী নকল করছে, এমন অভিযোগে সোমবার বাবা-মাকে ডেকে পাঠায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। ৩রা ডিসেম্বর, সেখানে তাদের অপমান করা হয় বলে অভিযোগ করেন অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী। এমনকি মেয়েকে ছাড়পত্র নিয়ে যেতেও বলা হয়। বাসায় এসেই আত্নহত্যা করে অরিত্রী। পরের দিন ৪ঠা ডিসেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী বাদী হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ-শিক্ষকসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন।
ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলার দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।
অর্থাৎ, আমাদের অনুসন্ধানে প্রমানিত যে টিকটক ও ফেসবুকে স্কুল-শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবরটি অপ্রাসঙ্গিক এবং মিথ্যা। ভিন্ন দুই সময়ের দুটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটের সংবাদকে একত্রিত করে প্রচার করা হয়।
Conclusion
টিকটক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া, স্কুল-শিক্ষার্থীর আত্নহত্যার দাবিটি অপ্রাসঙ্গিক এবং মিথ্যা।
Result: False
Our Sources
TikTok:
https://www.tiktok.com/@mr_alamin_official/video/7007850827461315841
https://www.tiktok.com/@lovlyboy.116/video/7008115050233826562
https://www.tiktok.com/@its_xayan/video/700807528687293568
BBC: https://www.bbc.com/bengali/news-46436254
Dhaka Tribune: https://www.dhakatribune.com/bangladesh/dhaka/2018/12/03/humiliated-by-school-student-commits-suicide
DBC 24/7 News, Youtube: https://www.youtube.com/watch?v=0C4sXIJKWnk
সন্দেহজনক কোনো খবর ও তথ্য সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে অথবা সত্যতা জানতে আমাদের লিখে পাঠান [email protected] অথবা whatsapp করুন- 9999499044 এই নম্বরে। এছাড়াও আমাদের সাথে Contact Us -র মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন ও ফর্ম ভরতে পারেন।