Claim-জাপানি নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী গবেষণায় বলেছেন রোজা রাখলে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস হয়
Fact-তিনি গবেষণার কোথাও রোজা রাখার ফলে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস হওয়ার কথা বলেন নি।
‘রোজা রাখলে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস হয়-জাপানি বিজ্ঞানী ইশিনোরি ওসিমির গবেষণা’ দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টিকটক এর বেশ কিছু জায়গায় একটি পোস্ট ছড়িয়ে পরে।
পোস্টগুলো দেখুন এখানে- ফেসবুক, ফেসবুক, ফেসবুক, ফেসবুক, ফেসবুক, ফেসবুক, টিকটক ও টিকটক।
এছাড়াও, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমগুলোতেও এ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন দেখুন এখানে- ইনকিলাব, কালের কণ্ঠ।
নিউজচেকার বাংলাদেশ দাবিটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে যে, দাবিটি মিথ্যা।
Fact check/ Verification
নিউজচেকার-বাংলাদেশ, গুগল কি-সার্চ এর সাহায্যে ও নিজস্ব অনুসন্ধানে দেখেছে যে সংশ্লিষ্ট দাবিটি মিথ্যা। জাপানি বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওহসুমি তার অটোফেজি নিয়ে গবেষণার কোন অংশে রোজা রাখার সাথে ক্যান্সারের ভালো হওয়ার কথা উল্লেখ করে নি।
নিউজচেকার-বাংলাদেশের অনুসন্ধানে দেখা যায় মূলত ২০১৬ সালে ইয়োশিনোরি’র চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পাওয়ার পর থেকেই তার গবেষণার বিষয় অটোফেজি’র ধারণাকে ধর্মীয় মোড়কে পরিবেশনের কাজ করে আসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর বিভিন্ন ব্যবহারকারীরা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যা যা দাবি করা হচ্ছে
অটোফেজির ধারণাকে ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিশেষ করে ধর্মীয় বিভিন্ন পেজ ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মূলত দাবিটি ছড়ানো হচ্ছে যে, ‘রোজা রাখলে ক্যান্সার ভালো হয়’। ফেসবুকে এই দাবি সংশ্লিষ্ট সবচেয়ে পুরাতন ২০১৯ সালের একটি পোস্ট খুজে পায় নিউজচেকার-বাংলাদেশ। দেখুন এখানে।
এ সকল পোস্ট ও লেখালেখির কোনটিতে সরাসরি বলা হচ্ছে জাপানি বিজ্ঞানী ওহসুমি ‘রোজা নিয়ে গবেষণা করেছেন;’ ‘রোজা রাখলে ক্যান্সার ভালো হয়’ ইত্যাদি ইত্যাদি। শুধু তা-ই নয়, রোজা রাখলে আরও বেশ কিছু সমস্যা দুরীভুত হয় বলে এসব পোস্টে দাবি করা হয় যার মধ্যে- ‘দেহের কোষ পরিষ্কার হয়/ক্যান্সার সেল ধ্বংস হয়/ বার্ধক্য প্রতিরোধ করে/ শরীর নিজে নিজেই সেরে যায়’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
ওহসুমির গবেষণা নিয়ে নোবেল কমিটির প্রেস রিলিজ দেখুন- এখানে। এই সংক্রান্ত প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
এই অপপ্রচার নিয়ে ইতিমধ্যে ২০১৭ সালে বিডিনিউজ২৪ একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে।
অটোফেজি ও ধর্মীয় মোড়কে অপপ্রচার
অটোফেজি শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দের মিশ্রণে তৈরি হইয়েছে। Autophagy শব্দটি auto ও phagein দুটি ভিন্ন শব্দ দ্বারা তৈরি। ওহসুমির একটি গবেষণাপত্র অনুসারে- Autophagy (macroautophagy) is an intracellular recycling system that mediates bulk degradation of cytoplasmic materials in response to nutrient starvation
অর্থাৎ, অটোফেজি হলো কোষের অভ্যন্তরীণ একটি প্রক্রিয়া যেখানে অসংশ্লেষিত প্রোটিনগুলোকে কোষ নিজ থেকেই নষ্ট করে ফেলে বা অন্য কোন উপায়ে কাজে লাগায়। কারণ এই অতিরিক্ত প্রোটিনকে নিঃষেশিত না করতে পারলে তা শরীরে থেকে গিয়ে পরবর্তীতে নানা রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
১অটোফেজি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার সহ নানা স্নায়বিক রোগ হুওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় বলে ইয়োশিনোরি তার গবেষণায় উল্লেখ করেন।
২এছাড়াও, অটোফেজি আমাদের কোষের নিয়মিত একটি প্রক্রিয়া। তবে না খেয়ে থাকা বা পানাহার থেকে বিরত থাকলে তা উদ্দীপ্ত হয় বলে গবেষণায় উঠে আসে।
মুলত, ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায় এই দুটি পয়েন্টকে ভিত্তি করেই তার সাথে রোজার সাদৃশ্য মিশিয়ে সংশ্লিষ্ট দাবিটি ছড়িয়ে দেয়া হয়।
অটোফেজি, রোজা ও দাবিগুলোর বৈধতা
পানাহার থেকে বিরত থাকলে আমাদের শরীরের কোষাভ্যন্তরীণ এই প্রক্রিয়া অর্থাৎ অটোফেজি উদ্দীপ্ত হয় তা ওহসুমি তার গবেষণায় উল্লেখ করে থাকলেও সেখানে ধর্মীয় কোন রীতি-নীতি পালনের অর্থাৎ রোজা, উপবাস বা অন্য কোন ডায়েট এর কথা সরাসরি কোথাও বলা হয় নি।
রোজার নানা উপকারীতা থাকলেও তা অটোফেজিকে কতটা প্রভাবিত করে, বা ক্যান্সার নিরাময়ে কতটা সাহায্য করে সে বিষয়ে কোন প্রমাণ ইয়োশিনোরির গবেষণাগুলোতে পাওয়া যায় নি। এমনকি ইয়োশিনোরি তার গবেষণাপত্র গুলোতে কতক্ষণ পানাহার থেকে বিরত থাকলে মানব দেহে অটোফেজি সক্রিয় হয় সে বিষয়েও কোন তথ্য উল্লেখ করেননি।
এছাড়াও বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে Dr David Rubinsztein, professor of molecular neurogenetics at the University of Cambridge and UK Dementia Research Institute,-কে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় ইদুরের উপর সফল্ভাবে অটোফেজির ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। ২৪ ঘন্টা ইদুরকে উপবাসে রাখার পর তার ভিতর অটোফেজি সক্রিয় হতে দেখা গেছে। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে সেটা কীভাবে কাজ করবে বা কতক্ষণ রোজা রাখতে হবে অটোফেজির জন্য তা এখনো আমরা জানি না।
‘For example, in mice, you see the effects of fasting on the brain in 24 hours, and in some areas of their body, like the liver, much more quickly. Yet even though we know fasting is beneficial, we don’t know yet exactly how long humans would need to fast to see the benefits,” said Dr Rubinsztein.’
অর্থাৎ রোজা অটোফেজিকে সরাসরি প্রভাবিত করে বা ক্যান্সার নিরাময়ে সাহায্য করে বলে এমন কোন গবেষণা ওহসুমি করেননি বা তার কোন গবেষণায় এমন তথ্য উল্লেখ করে নি।
Conclusion
সুতরাং, রোজা রাখার ফলে ক্যান্সার ভালো হয় এই সংশ্লিষ্ট দাবিটি মিথ্যা। ইয়োশিনোরি তার কোন গবেষণা পত্রে এমন কোন কথা বলেননি।
Result: False
Our Sources
বিবিসি- https://www.bbc.com/news/health-44005092
ওহসুমির গবেষণা সমূহ-https://www.titech.ac.jp/english/nobel/publication
অটোফেজি নিয়ে ওহসুমির পেপার-https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S153458071630418X
প্রথম আলো- https://nagorik.prothomalo.com/durporobash/%E0%
বিডিনিউজ২৪- https://bangla.bdnews24.com/blog/218175
সন্দেহজনক কোনো খবর ও তথ্য সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে অথবা সত্যতা জানতে আমাদের লিখে পাঠান [email protected]। এছাড়াও আমাদের সাথে Contact Us – ফর্মের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন।