সম্প্রতি টিকটকে একটি ভিডিওতে নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন “সরকারকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অধীনে নির্বাচন দিতে হবে” বলেছেন এই দাবী করা হয়ে থাকে।
ভিডিওটি দেখুন- টিকটকে।
ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশট দেখুন নিচে-
নিউজচেকার-বাংলাদেশ, ফ্যাক্ট চেক করে দেখেছে যে দাবিটি মিথ্যা। নব-নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি চুপ্পু কোথাও এই বক্তব্য দেননি।
Fact check/ Verification
গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে একটি ভিডিওতে দাবী করা হয় নতুন রাষ্ট্রপতি, “সরকারকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে”- এই বক্তব্য করেন।
গুগল কি-ওয়ার্ড সার্চ ও ভিডিও কি-ফ্রেম এর সাহায্যে জানা গেছে যে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তার ইন্টারভিউয়ের মূল বক্তব্যে এমন কোন কথা বলেন নি।
মূলত কিছুদিন আগে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের নাম মনোনীত হওয়া অতঃপর নির্বাচিত হওয়ার সময়কালে এখন টিভি এর এক ইন্টারভিউতে তিনি সাংবাদিককে আসন্ন নির্বাচন ও তার সার্বিক অন্যান্য পরিকল্পনা নিয়ে বলছিলেন। সেই ইন্টারভিউয়েরই একটি অংশ টিকটকের ভিডিওটিতে তুলে ধরে এই মিথ্যা দাবী করা হয়। যদিও সংযুক্ত অংশটিতে এই বক্তব্যের কোন হদিস পাওয়া যায় নি।
মূল ভিডিও এর ২৪ঃ৩৪- ২৪ঃ ৩৮ এর মাঝে তিনি এই কথা(টিকটকে সংযুক্ত অংশ) বলেন। আর টিকটকে শুধু এই অংশটুকুই ব্যবহার করা হয় যা অনেকটা এমন ছিলো- “সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এটাই সব থেকে বড় উপায়।”
ইন্টারভিউর নির্দিষ্ট এই অংশের একটি স্ক্রিনশট নিচে দেখুন-
মূল ইন্টারভিউ দেখুন- এখন টিভি
এর আগে প্রায় ২৫ মিনিট দীর্ঘ ইন্টারভিউটির ১৯ঃ৩০ মিনিট ও ২০ঃ২০ মিনিট এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সংবিধান সংশোধনে এর বাদ পড়া নিয়ে আলোচনা করে থাকেন। এছাড়াও তিনি এই ইন্টারভিউতে জাতীয় নির্বাচনে ইলেকশন কমিশন ও রাষ্ট্রপতির ভুমিকা ও দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার কীঃ
সাধারণত এক সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সরকারের দায়িত্ব নেয়ার অন্তঃকালীন সময়টুকুতে একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন সরকার গঠন করা হয়ে থাকে যা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নামে পরিচিত। এই তত্ত্বাবধকায়ক সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে নতুন সরকারের আবির্ভাব ঘটে।
দেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারঃ
বাংলাদেশে ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসন এর পতনের মধ্য দিয়ে পুনরায় নতুন করে গণতন্ত্র ব্যবস্থার পথ সুগম করা হয়। ১৯৯০ সালের নির্বাচনের প্রধান তিন প্রতিদ্বন্দী দল একটি সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের লক্ষ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থার দাবী উপস্থাপন করেন। আর তখনই প্রথম বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আবির্ভাব হয়। ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
তবে সেই বছর কোন প্রকার সাংবিধানিক সংশোধন না করেই এই সরকার ব্যবস্থা গঠন করা হয়েছিলো। তবে পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮ (খ), (গ), (ঘ) ও (ঙ) তে এটি অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে ১৯৯৬- ২০০১ ও ২০০৬-৭ এর নির্বাচন এই সরকার ব্যবস্থার অধীনে হয়ে থাকে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলুপ্তিঃ
২০০৬/৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতার অনিচ্ছা ও জাতীয় অনৈক্য দেখা দিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেখলে তিনি ১ জানুয়ারি ২০০৭ সালে দেশ ব্যাপী জরুরী অবস্থা জারি করেন। এক বছর পর ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নবম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতা লাভ করে।
পরবর্তীতে ২০১১ সালে জুন মাসে সরকার প্রধান দল আওয়ামী লীগ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের জন্য বিল উপস্থাপন করলে সংসদ সদস্যদের সমর্থনে সেই বিলটি পাশ হয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।
এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেখুন- BBC Bangla
বর্তমান সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাঃ
বর্তমান সরকার নির্বাচন ব্যবস্থার দায়িত্ব দেয়া হবে রাষ্ট্রপতি দ্বারা গঠিত একটি কমিশনের হাতে। এই বিষয়ে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, “প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং এ বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধান সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দিবেন।”
Conclusion:
নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তার কোন ইন্টারভিউতে উক্ত বক্তব্য ব্যক্ত করেননি। বরং তিনি বলেছেন এই ব্যবস্থা বর্তমানে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। সুতরাং উক্ত দাবীটি মিথ্যা।
Results: False
Our Sources:
Our Sources: Ekhon TV- https://www.youtube.com/watch?v=c1-6lHOZJLg
BBC Bangla- https://www.bbc.com/bengali/news/2011/06/110630_sa
Bangladesh Election Comission-http://ecs.portal.gov.bd/
সন্দেহজনক কোনো খবর ও তথ্য সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে অথবা সত্যতা জানতে আমাদের লিখে পাঠান [email protected]। এছাড়াও আমাদের সাথে Contact Us – ফর্মের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন।